রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

দুইশ ছুঁইছুঁই ব্রয়লার মুরগি

দুইশ ছুঁইছুঁই ব্রয়লার মুরগি

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে গতকাল রবিবার ব্রয়লার মুরগি কিনতে গিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে তর্কে জড়ান বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আশরাফ হোসেন। তিনি জানালেন, গত সপ্তাহেও ১৫৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি। গত শুক্রবার কিনতে এসে শুনলাম ১৮০ টাকা। আর আজকে চাচ্ছে ১৯০ টাকা। এ কিসের আলামত। এভাবে প্রত্যেক দিন দাম বাড়ে কীভাবে বুঝে পাই না।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার ২০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী ব্রয়লারের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ২২.৫৮ শতাংশ, মাসের ব্যবধানে ২৪.৫৯ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৩১.০৩ শতাংশ বেড়েছে। ডিমের দামও এক সপ্তাহে ৮.২৩ শতাংশ এবং মাস ও বছরের ব্যবধানে ২৬.০৩ শতাংশ বেড়েছে।

মালিবাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. ফারুক হোসেন জানালেন, শীতের কারণে সরবরাহ কমলেও দাম এতটা বাড়ার কথা না। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার পাইকারিতে পড়েছে প্রতিকেজি ১৬৮ থেকে ১৭২ টাকা। শুক্রবার তা ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল রবিবার কাপ্তানবাজারে কেনা দাম পড়েছে ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। এ মুরগি খুচরায় বিক্রি করতে হচ্ছে ১৯০ টাকা পর্যন্ত।
একই বাজারের ডিম বিক্রেতা রুহুল আমিন জানান, মুরগির মতো ডিমের দরও লাফিয়ে বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১২৫ টাকা ডজন থেকে কয়েক ধাপে দাম বেড়ে এখন ১৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। তিনি বলেন, আজ এক দাম তো কালকে আরেক দাম বাজারের অবস্থা এমন ছিল। কেনা দাম (১০০ পিস) ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। এখন ১০০ পিস কেনা পড়ছে ১ হাজার ৮০ টাকা। প্রতিপিসের দাম পড়ছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা। বাছাই ও অন্যান্য খরচের পর এই ডিমের ডজন ১৩৫ টাকার নিচের বিক্রি করার সুযোগ নেই। দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ জানাতে পারেননি তিনি।

ফারুক কিংবা রুহুল তথ্য দিতে না পারলেও খামারিরা বলছেন, সম্প্রতি একদিনের বাচ্চার দাম হু হু করে বেড়েছে। এর প্রভাব বাজারে বেড়েছে। পোল্ট্রি খামার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, একদিনের বাচ্চার সম্পূর্ণ বাজার বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর অধীনে। গত মাসেও একদিনের যে বাচ্চা ৯ টাকায়ও পাওয়া গেছে। রবিবার তা ৫৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সোমবার হয়তো ৬০ টাকায়ও কিনতে হতে পারে। করপোরেট কোম্পানিগুলোর এমন স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বাজারে এমন অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া পোল্ট্রি ফিডের দামও অনেক বাড়তি। তাই ডিমের দামও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ডিম নিয়েও নানা কারসাজি করছে কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের একদিনের বাচ্চা কিনতে হয়েছে জানুয়ারির ৯ তারিখে ৯ টাকা, ১৫ তারিখে ১৫ থেকে ১৮ টাকা, ২৫ তারিখে ৩০ টাকা, ২৬ তারিখে ৩৬ টাকা, ৩০ তারিখে ৪০ টাকা। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে ৩৯ থেকে ৪২ টাকা এবং ৫ তারিখে তা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায় কিনতে হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, মুরগি ও ডিম দাম নির্ধারণে তারা এখনো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার ‘ওরগানিক এগ্রোর’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. মিরাজুল হাসান ভুইয়া বলেন, আমরা খামারিরা আগের মতোই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ব্যবসায়ী সমিতির নির্ধারিত দামেই মুরগি-ডিম বিক্রি করতে হয়। তাতে খামারিদের লাভ হোক আর লোকসানই হোক।

গত সেপ্টেম্বরে ডিম বিক্রি হয় রেকর্ড দামে। সে সময় ব্রয়লারের দামও ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বাজারে অনুসন্ধান চালালে সরকারি সংস্থার বিশেষ অভিযান ও অনুসন্ধানে উঠে আসে কারসাজির তথ্য। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনও জানায়, ওই সময় একটি চক্র ১৫ দিনে ডিমে ১১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে বেরিয়ে আসে অনিয়মের নানা তথ্য। সংস্থাটি দেখতে পায়, ডিমের আড়তে ডিম কেনার পাকা রসিদ সংরক্ষণ করা হয় না। ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নয়, ডিমের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে দেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। বাজারে অভিযানের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির হুশিয়ারিতে রাতারাতি দাম কমে যায়। এর পর অনেকটা সময় ডিমের দাম স্থিতিশীল ছিল। রোজার আগে বর্তমানে আবারও অস্থির হয়ে উঠছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে তো আর দাম নির্ধারণ করা হয় না। দাম নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলে বাজার তদারকি আরও সহজ হতো। পাশাপাশি রমজান মাসকে সামনে রেখেও অনেকে বিভিন্ন পণ্যে দাম বাড়ানো চেষ্টা চালায়। আমরা বাজার তদারকি জোরদার করেছি। এ রকম কিছু পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877